ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ১২ বছরের অভিশাপ কাটল কলকাতা নাইট রাইডার্সের।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে ২৪ রানে হারিয়ে প্লে অফের দিকে আরও এক কদম এগিয়ে গেলেন শাহরুখ খানের নাইটরা। সেই শহরে, যেখানে একটা জয়ের জন্য দলের কাছে কাকুতি-মিনতি করেছেন শাহরুখ। তাঁর সেই বিখ্যাত মন্তব্য, 'এই শহর আমাকে বাদশা বলে ডাকে। এখানে অন্তত একবার তোমরা জেতো।'
আইপিএলের ১৭ বছরের ইতিহাসে ওয়াংখেড়েতে একবারমাত্র জিতেছিল কেকেআর। ২০১২ সালে। সেই ম্যাচের নায়ক ছিলেন নারাইন। ৪ উইকেট নিয়ে। এদিনও সেই নারাইন জ্বলে উঠলেন। ৪ ওভারে মাত্র ২২ রান খরচ করে নিলেন ২ উইকেট। ৪ ওভারে ২২ রানে ২ উইকেট বরুণ চক্রবর্তীরও। ৪ উইকেট স্টার্কের। ২ উইকেট আন্দ্রে রাসেলের। প্রথমে ব্যাট করে ১৯.৫ ওভারে ১৬৯ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল কেকেআর। রান তাড়া করতে নেমে ১৮.৫ ওভারে শেষ মুম্বই। ১৪৫ রানে।
মুম্বই: মিচেল স্টার্কের বলে লং অফ বাউন্ডারিতে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা টিম ডেভিডের (Tim David) ক্যাচ নিয়ে মাটিতে বল ছুড়ে যে আগ্রাসন শ্রেয়স আইয়ার দেখালেন, কে বলবে যে এই মাঠে খেলেই তিনি বড় হয়েছেন! এরকম তো দেখা যায় ভারত-পাক দ্বৈরথে।
সুনীল নারাইন মানেই বরফশীতল ভাবমূর্তি। ছক্কা মারলেও নির্লিপ্ত। উইকেট পেলেও ভাবলেশহীন। তাঁর বলে রোহিত শর্মার ক্যাচ মণীশ পাণ্ডে (Manish Pandey) তালুবন্দি করতে সেই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারই সেলিব্রেট করলেন। ছক ভেঙে।
আর মিচেল স্টার্ক ? তাঁর কথা না বললে যে শুক্রবারের ব্লকবাস্টার মুভির এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের কথাই বাদ থেকে যায়। আইপিএলের (IPL 2024) ইতিহাসে সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার। চলতি আইপিএলে সবচেয়ে সমালোচিতও। দাম নিয়ে পদে পদে খোঁটা। ১৯তম ওভারে যখন বল করতে এলেন, মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ম্যাচ জিততে ১২ বলে চাই ৩২। স্টার্কের প্রথম বলই গ্যালারিতে ওড়ালেন টিম ডেভিড। বিপজ্জনক হয়ে উঠছেন যিনি ক্রমশ। নাইট ভক্তরা বলাবলি করলেন, শুরু হয়ে গেল স্টার্কের রান বিলি করা। স্টার্ক জবাব দিলেন পরের ৪ বলে তিন উইকেট তুলে নিয়ে। প্রথমে ডেভিড। তারপর পীযূষ চাওলা ও জেরাল্ড কোয়েৎজ়ে। কোয়েৎজ়ের মিডল স্টাম্প ছিটকে দিয়ে হুঙ্কার স্টার্কের। মুষ্টিবদ্ধ দুহাত। শরীরটা পিছনের দিকে ঝুঁকে গেল উৎসবের আতিশয্যে। যেন পারফরম্যান্সেই সব নিন্দার জবাব।
প্রথমে ব্যাট করে নাইট ইনিংস দুবার বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। প্রথম ধাক্কা শুরুর ৩৭ বলে। যেখানে ৫৭ রান তুলতে গিয়ে ৫টি উইকেট হারিয়ে বসেছিল কেকেআর । শুরুর সেই বিপর্যয় অবশ্য সামলে দিয়েছিলেন বেঙ্কটেশ আইয়ার ও মণীশ পাণ্ডে।
অঙ্গকৃষ রঘুবংশী আউট হওয়ার পর তাঁর পরিবর্তে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে নামানো হয়েছিল অভিজ্ঞ মণীশকে। চলতি আইপিএলে পুরনো দলের জার্সিতে প্রথমবার মাঠে নামলেন। ৩১ বলে ৪২ রান করলেন। ষষ্ঠ উইকেটে ৬২ বলে ৮৩ রানের পার্টনারশিপ গড়ে কেকেআরকে ম্যাচে ফেরালেন দুই ব্যাটার। ৫২ বলে ৭০ বেঙ্কটেশের। তিনিই ম্যাচের সেরা হয়েছেন।
কিন্তু শেষ বেলায় ফের ধাক্কা খায় কেকেআর। মাত্র ২১ বলের ব্যবধানে বাকি ৫ উইকেট হারায় কেকেআর। পুরো ২০ ওভারও ব্যাট করতে পারলেন না নাইটরা। ১৯.৫ ওভারে ১৬৯ রানে অল আউট হয়ে যায় কেকেআর। তখনও ভাবা যায়নি যে, বল হাতে ভেল্কি দেখাবেন নাইট বোলাররা।
শেষ মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের প্লে অফের স্বপ্নও। ১১ ম্যাচে ৬ পয়েন্টে আটকে রইলেন হার্দিক পাণ্ড্যরা। শেষ তিন ম্যাচ জিতলেও ১২ পয়েন্টে আটকে যাবেন। টুর্নামেন্টের প্রথম দল হিসাবে প্লে অফের দৌড় থেকে একেবারে ছিটকে গেল পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা।
শাহরুখ কি নিজস্ব ঢঙে বলে উঠলেন, বারবার হারতে হারতে, মার খেতে খেতে এভাবেই পাল্টা ফিরিয়ে দিতে হয়। তাঁর সিনেমারই তো বিখ্যাত সেই সংলাপ, হারকে জিতনে ওয়ালোকো বাজিগর কহলাতা হ্যায়...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন